
মহাবিদ্যা - ১
বক্তৃতা-গৃহ। উচ্চ বেদীর উপর আচার্যের আসন। বেদীর নীচে ছাত্রদের
জন্য শ্রেণীবদ্ধ চেয়ার ও বেঞ্চ।
প্রথম শ্রেণীতে আছেন –
হোমরাও সিং মহারাজা
চোমরাও আলি নবাব
খুদীন্দ্রনারায়ণ জমিদার
মিস্টার গ্র্যাব বণিক
মিস্টার হাউলার সম্পাদক
ইত্যাদি
দ্বিতীয় শ্রেণীতে –
মিস্টার গুহা রাজনীতিজ্ঞ
নিতাইবাবু সম্পাদক
প্রফেসার গুঁই অধ্যাপক
রূপচাঁদ বণিক
লুটবেহারী ইনসলভেন্ট
গাঁট্টালাল গেঁড়াতলার সর্দার
তেওয়ারী জমাদার
ইত্যাদি
তৃতীয় শ্রেণীতে –
মিস্টার গুপ্টা বিশেষজ্ঞ
সরেশচন্দ্র নূতন গ্রাজুয়েট
নিরেশচন্দ্র ঐ
দীনেশচন্দ্র কেরানী
ইত্যাদি
চতুর্থ শ্রেণীতে –
পাঁচুমিয়া মজুর
গবেশ্বর মাষ্টার
কাঙালীচরণ নিষ্কর্মা
আরও অনেক লোক
প্রথম শ্রেণীর কথা
মিস্টার গ্রাব। হ্যাল্লো মহারাজা, আপনিও দেখছি ক্লাসে জয়েন করেছেন।
হোমরাও সিং। হ্যাঁ, ব্যাপারটা জানবার জন্য বড়ই কৌতূহল হয়েছে। আচ্ছা, এই জগদ্গুরু লোকটি কে?
গ্রাব । কিছুই জানি না। কেউ বলে, এঁর নাম ভ্যাণ্ডারলুট, আমেরিকা থেকে এসেছেন; আবার কেউ বলে, ইনিই প্রফেসার ফ্রাঙ্কেনস্টাইন। ফাদার ওব্রায়েন সেদিন বলছিলেন, লোকটি devil himself – শয়তান স্বয়ং। অথচ রেভারেণ্ড ফিগস্ বলেন, ইনি পৃথিবীর বিজ্ঞতম ব্যক্তি, একজন সুপারম্যান। একটা কমপ্লিমেন্টারি টিকিট পেয়েছি, তাই মজা দেখতে এলুম।
মিস্টার হাউলার। আমিও একখানা পেয়েছি।
হোমরাও। বটে? আমরা তো টাকা দিয়ে কিনেছি, তাও অতি কষ্টে। হয়তো জগদ্গুরু জানেন যে আপনাদের শেখবার কিছু নেই, তাই কমপ্লিমেন্টারি টিকিট দিয়েছেন।
খুদীন্দ্রনারায়ণ। শুনেছি লোকটি নাকি বাঙালী, বিলাত থেকে ভোল ফিরিয়ে এসেছে। আচ্ছা, বলশেভিক নয় তো?
চোমরাও আলি। না না, তা হ’লে গভর্নমেন্ট এ লেক্চার বন্ধ ক’রে দিতেন। আমার মনে হয়, জগদ্গুরু তুর্কি থেকে এসেছেন।
হাউলার। দেখাই যাবে লোকটি কে।
দ্বিতীয় শ্রেণীর কথা
নিতাইবাবু। জগদ্গুরু কোথায় উঠেছেন জানেন কি? একবার ইন্টারভিউ করতে যাব।
মিসটার গুহা। শুনেছি, বেঙ্গল ক্লাবে আছেন ৷
রূপচাঁদ। না না, আমি জানি, পগেয়াপটিতে বাসা নিয়েছেন।
লুটবেহারী। আচ্ছা উনি যে মহাবিদ্যার ক্লাস খুলেছেন, সেটা কি? ছেলেবেলায় তো পড়েছিলুম কালী, তারা, মহাবিদ্যা
প্রফেসার গুই। আরে, সে বিদ্যা নয়। মহাবিদ্যা কিনা সকল বিদ্যার সেরা বিদ্যা, যা আয়ত্ত হ’লে মানুষের অসীম ক্ষমতা হয়, সকলের উপর প্রভুত্ব লাভ হয় ৷
রূপচাঁদ ৷ এখানে তো দেখছি হাজারো লোক লেকচার শুনতে এসেছে। সকলেরই যদি প্রভুত্ব লাভ হয় তবে ফরমাশ খাটবে কে?
গাঁট্টালাল। এইজন্যে ভাবছেন? আপনি হুকুম দিন, আমি আর তেওয়ারী দুই দোস্ত মিলে সবাইকে হাঁকিয়ে দিচ্ছি। কিছু পান খেতে দেবেন –
তেওয়ারি। না – না, এখন গণ্ডগোল বাধিও না, – সাহেবরা রয়েছেন ৷
তৃতীয় শ্রেণীর কথা
সরেশ। আপনিও বুঝি এই বৎসর পাস করেছেন? কোন্ লাইনে যাবেন, ঠিক করলেন?
নিরেশ। তা কিছুই ঠিক করিনি । সেইজন্যই তো মহাবিদ্যার ক্লাসে ভর্তি হয়েছি, যদি একটা রাস্তা পাওয়া যায়। আচ্ছা এই কোর্স অভ লেকচার্স আয়োজন করলে কে?
সরেশ। কি জানি মশায়। কেউ বলে, বিলাতের কোনও দয়ালু ক্রোরপতি জগদ্গুরুকে পাঠিয়েছেন। আবার শুনতে পাই, ইউনিভার্সিটিই নাকি লুকিয়ে এই লেকচারের খরচ যোগাচ্ছে।
মিস্টার গুপ্টা। ইউনিভার্সিটির টাকা কোথা? যেই টাকা দিক, মিথ্যে অপব্যয় হচ্ছে। এ রকম লেকচারে দেশের উন্নতি হবে না। ক্যাপিট্যাল চাই, ব্যাবসা চাই।
দীনেশ৷ তবে আপনি এখানে এলেন কেন? এইসব রাজা-মহারাজারাই বা কি জন্য ক্লাসে অ্যাটেণ্ড করেছেন? নিশ্চয়ই একটা লাভের প্রত্যাশা আছে। এই দেখুন না, আমি সামান্য মাইনে পাই, তবু ধার ক’রে লেকচারের ফী জমা দিয়েছি যদি কিছু অবস্থার উন্নতি করতে পারি।
সরেশ। জগদগুরু আসবেন কখন? ঘণ্টা যে কাবার হয়ে এল।
চতুর্থ শ্রেণীর কথা
গবেশ্বর। কিহে পাঁচুমিয়া, এখানে কি মনে করে?
পাঁচুমিয়া। বাবুজী, এক টাকা রোজে আর দিন চলে না। তাই থারিয়া-লোটা বেচে একটা টিকিট কিনেছি, যদি কিছু হদিস পাই । তা আপনারা এত পিছে বসেছেন কেন হুজুর? সামনে গিয়ে বাবুদের সাথ বসুন না।
কাঙালীচরণ। ভয় করে।
গবেশ্বর। আমরা বেশ নিরিবিলিতে আছি। দেখ পাঁচু, তুমি যদি বক্তৃতার কোনও জায়গা বুঝতে না পার তো আমাকে জিজ্ঞাসা ক’রো।
ঘন্টাধ্বনি। জগদগুরুর প্রবেশ। মাথায় সোনার মুকুট, মুখে মুখোশ, গায়ে গেরুয়া আলখাল্লা। তিনি আসিয়া বহির্বাস খুলিয়া ফেলিলেন। মাথা কামানো, গায়ে তেল, পরনে লেংটি, ডান-হাতে বরাভয়, বাঁ হাতে সিঁদকাটি। পট্ পট্ হাততালি।