
শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী লিমিটেড - ২
শীঘ্রই নুতন দেবালয় আরম্ভ হইবে। তৎসংলগ্ন প্রশস্ত নাটমন্দির, নহবতখানা, ভোগশালা, ভাণ্ডার প্রভৃতি আনুষঙ্গিক গৃহাদিও থাকিবে। আপাতত দশ হাজার যাত্রীর উপযুক্ত অতিথিশালা নির্মিত হইবে। শেয়ার- হোল্ডারগণ বিনা খরচায় সেখানে সপরিবারে বাস করিতে পারিবেন। হাট বাজার যাত্রা থিয়েটার বায়োস্কোপ ও অন্যান্য আমোদ-প্রমোদের আয়োজন যথেষ্ট থাকিবে। যাঁহারা দৈবাদেশ বা ঔষধপ্রাপ্তির জন্য হত্যা দিবেন তাঁহাদের জন্য বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা থাকিবে। মোট কথা, তীর্থযাত্রী আকর্ষণ করিবার সর্বপ্রকার উপায়ই অবলম্বিত হইবে। স্বয়ং শ্রীমৎ শ্যামানন্দ ব্রহ্মচারী ৺সেবার ভার লইবেন।
যাত্রিগণের নিকট হইতে যে দর্শনী ও প্রণামী আদায় হইবে, তাহা ভিন্ন আরও নানা উপায়ে অর্থাগম হইবে। দোকান হাট বাজার অতিথিশালা মহাপ্রসাদ বিক্রয় প্রভৃতি হইতে প্রচুর আয় হইবে। এতভিন্ন by-product recoveryর ব্যবস্থা থাকিবে। ৺সেবার ফুল হইতে সুগন্ধি তৈল প্ৰস্তুত হইবে এবং প্রসাদী বিল্বপত্র মাদুলীতে ভরিয়া বিক্রীত হইবে। চরণামৃতও বোতলে প্যাক করা হইবে। বলির জন্য নিহত ছাগসমূহের চর্ম ট্যান করিয়া উৎকৃষ্ট কিড-স্কিন প্রস্তুত হইবে এবং বহুমূল্যে বিলাতে চালান যাইৰে। হাড় হইতে বোতাম হইবে। কিছুই ফেলা যাইবে না।
গণ্ডেরি। বকড়ি মারবেন? হামি ইসমে নেহি, রামজী কিরিয়া। হামার নাম কাটিয়ে দিন।
শ্যাম। আপনি তো আর নিজে বলি দিচ্ছেন না। আচ্ছা, না হয় কুমড়ো-বলির ব্যবস্থা করা যাবে।
অটল। কুমড়োর চামড়া তো ট্যান হবে না ৷ আয় ক’মে যাবে। কিহে বৈজ্ঞানিক, কুমড়োর খোসার একটা গতি করতে পার?
বিপিন। কস্টিক পটাশ দিয়ে বয়েল করলে বোধ হয় ভেজিটেবল্ শু হ’তে পারে। এক্সপেরিমেন্ট ক’রে দেখব৷
গণ্ডেরি। জো খুশি করো। হমার কি আছে। হামি থোড়া রোজ বাদ আপনা শেয়ার বিলকুল বেচে দিব।
হিসাব করিয়া দেখা হইয়াছে যে কোম্পানির বাৎসরিক লাভ অন্তত ১২ লক্ষ টাকা হইবে এবং অনায়াসে ১০ পারসেন্ট ডিভিডেন্ড দেওয়া যাইবে ৷ ৩০ হাজার শেয়ারের আবেদন পাইলেই অ্যালটমেন্ট হইবে। সত্বর শেয়ারের জন্য আবেদন করুন। বিলম্বে এই সুবর্ণসুযোগ হইতে বঞ্চিত হইবেন।
গণ্ডেরি। লিখে লিন ঢাই লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি হয়ে গেছে। হামি এক লাখ লিব, বাকী দেড় লাখ শ্যামবাবু বিপিনবাবু অটলবাবু সমান হিস্সা লিবেন।
শ্যাম। পাগল আর কি ! আমি আর বিপিন কোথা থেকে পঞ্চাশ-পঞ্চাশ হাজার বার করব? আপনারা না হয় বড়লোক আছেন।
গগুেরি। হামি-শালা রূপয়া ডালবো আর তুমি লোগ মৌজ করবে? সো হোবে না। সব কা ঝোঁথি লেনা পড়েগা। শ্যামবাবু মতলব সমঝলেন না? টাকা কোই দিব না। সব হাওলাতী থাকবে। মেনেজিং এজিণ্ট মহাজন হোবে।
অটল। বুঝলেন শ্যাম-দা? আমরা সকলে যেন ম্যানেজিং এজেন্টদের কাছ থেকে কর্জ ক’রে নিজের নিজের শেয়ারের টাকা কোম্পানিকে দিচ্ছি; আবার কোম্পানি ঐ টাকা ম্যানেজিং এজেন্টদের কাছে গচ্ছিত রাখছে। গাঁট থেকে এক পয়সাও কেউ দিচ্ছেন না, টাকাটা কেবল খাতাপত্রে জমা থাকবে।
শ্যাম। তারপর তাল সামলাবে কে? কোম্পানি ফেল হলে আমি মারা যাই আর কি ! বাকী কলের টাকা দেব কোথা থেকে?
গগুেরি। ডরেন কেনো? শেয়ার পিছ তো অভি দো টাকা দিতে হোবে। ঢাই লাখ টাকার শেয়ারে সি পচাস হজার দেনা হোয়। প্রিমিয়ম যে সব বেচে দিব সুবিস্তা হোয় তো আউর ভি শেয়ার ধ’রে রাখবো। বহুত মুনাফা মিলবে। চিম্ড়িমল ব্রোকারসে হামি বন্দোবস্ত কিয়েছি। দো চার দফে হম লোগ আপনা আপনি শেয়ার লেকে খেলবো, হাথ বাদলাবো, দাম চঢ়বে, বাজার গরম হোবে। তখন সব কোই শেয়ার মাংবে, দাম কা বিচার করবে না। কবীরজী কি বচন শুনিয়ে - ঐসী গতি সসারমে যে৷ গাড়র কি ঠাট। এক পড়া যব গাঢ়মে সবৈ যাত তেহি বাট মানি হচ্ছে – সনসারের লোক সব যেন ভেড়ার পাল ৷ এক ভেড়া যদি খাদ্দেমে গির পড়ে তো সব কোই উসিমে ঘুসে।
শ্যামবাবু দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়িয়া বলিলেন ব্রহ্মময়ী, তুমিই জান। আমি তো নিমিত্ত মাত্র। তোমার কাজ তুমিই উদ্ধার ক’রে দাও মা অধম সন্তানকে যেন মেরো না।
গণ্ডেরি। শ্যামবাবু, মন্দিল-উন্দিলকা কোম্পানি যো করনা হ্যায় কিজিয়ে। উকি সাথ ঘই-এর কারবার ভি লাগায় দিন। টাকায় টাকা লাভ।
অটল। ঘই কি চিজ?
গণ্ডেরি। ঘই জানেন না? ঘিউ হচ্ছে আসলি চিজ—যো গায় ভঁইস বকড়িকা দুধসে বনে। আউর নক্লি যো হ্যায় সো ঘই কহলাতা। চর্বি, চীনাবাদাম তেল ওগায়রহ, মিলাকর্ বনায়া যাতা। পর্ সাল হামি ঘই-এর কামে পচিশ হজার লাগাই, সাঢ়ে চৌবিশ হজার মুনাফা মিলে।
অটল। উঃ বিস্তর সাপ মেরেছিলেন বলুন!
গণ্ডেরি। আরে সাঁপ কাঁহাসে মিলবে? উ সব ঝুট বাত৷
অটল। আচ্ছা গণ্ডারজী
গণ্ডেরি। গণ্ডার নেহি, গণ্ডেরি।
অটল। হাঁ হাঁ, গণ্ডেরিজী। বেগ ইওর পার্ডন। আচ্ছা, আপনি তো নিরামিষ খান, ফোঁটা কাটেন, ভজন-পূজনও করেন৷
গণ্ডেরি। কেনো করবো না? হামি হর্ রোজ গীতা আউর রামচরিতমানস পঢ়ি, রামভজন ভি করি।
অটল। তবে অমন পাপের ব্যাবসাটা করলেন কি বলে?
গণ্ডেরি। পাঁপ? হামার কেনো পাঁপ হোৰে? বেবসা তো করে কাসেম আলি। হামি রহি কলকত্তা, ঘই বনে হাথরমে। হামি ন আঁখসে দেখি, ন নাকসে হলুমানজী কিরিয়া। হামি তো সির্ফ মহাজন রুপয়া দে কর্ খালাস। সুদ লি, মুনাফার আধা হিস্সা ভি লি। যদি হামি টাকা না দি, কাসেম আলি দুসরা ধনীসে লিবে। পাপ হোবে তো শালা শুংখি আছি কাসেম আলিকা হোবে। হামার কি?
কুছ দোষ লাগে 一 ফিন জানে রন্ছোড়জী 一 হামার পুন্ভি থোড়া-বহুত জমা আছে। একাদসী, শিউরাত, রামনওমীমে উপবাঁস, দান-খয়রাত ভি কুছু করি। আট আটঠো ধরমশালা বানোআয়া 一লিলুয়ামে,বালিমে, শেওড়াফুলিমে 一
অটল। লিলুয়ার ধর্মশালা তো আশরফিলাল ঠুনঠুনওয়ালা করেছে।
গণ্ডেরি। কিয়েছে তো কি হইয়েছে? সভি তো ওহি কিয়েছে। লেকিন বানিয়ে দিয়েছে কোন্? তদারক কোন্ কিয়েছে? ঠিকাদার কোন্ লাগিয়েছে? সব হামি। আশরফি হমার চাচেরা ভাই লাগে ৷ হামি সলাহ দিয়েছি তব, না রুপয়া খরচ কিয়েছে!
অটল। মন্দ নয়, টাকা ঢাললে আশরফি, পুণ্য হ’ল গণ্ডেরির।
গণ্ডেরি। কেনো হোবে না? দো দে৷ লাখ রুপেয়া হর্ জগেমে খরচ দিয়া। জোড়িয়ে তো কেতনা হোয়। উস পর কমসে কম সঁয়কড়া পাঁচ রুপয়া দস্তুরি তো হিসাব কিজিয়ে। হাম তো বিলকুল ছোড় দিয়া। আশরফিলালকা পুন্ যদি সোলহ্ লাখকা হোয়, মেরা ভি অসি হাজার মোতাবেক হোনা চাহতো।
অটল। চমৎকার ব্যবস্থা! পুণ্যেরও দেখছি দালালি পাওয়া যায়। আমাদের শ্যাম-দা গণ্ডেরি-দা যেন মানিকজোড়।
গণ্ডেরি। অটলবাবু, আপনি দো চার অংরেজী কিতাব পঢ়িয়ে হামাকে ধরম কি শিখ লাবেন? বঙ্গালী ধরম জানে না। তিস রুপয়ার নোকরি করবে, পাঁচ পইসার হরিলুঠ দিবে। হামার জাত রুপয়া ভি কামায় হিসাবসে, পুন্ ভি করে হিসাবসে। আপনেদের রবীন্দরনাথ কি লিখছেন 一 বৈরাগ সাধন মুক্তি সো হমার নহি। হামি এখন চলছি, রেস খেলনে। কোন্টি গেরিল ঘোড়ে পর্ আজ দো-চারশও লাগিয়ে দিব।
অটল। আমিও উঠি শ্যাম-দা। আর্টিকেলের মুসবিদা রেখে যাচ্ছি, দেখে রাখবেন। প্রস্পেক্টস তো দিব্বি হয়েছে। একটু-আধটু বদলে দেব এখন। পরশু আবার দেখা হবে। নমস্কার।
বাগবাজারে গলির ভিতর রায়সাহেব তিনকড়িবাবুর বাড়ি। নীচের তলায় রাস্তার সম্মুখে নাতিবৃহৎ বৈঠকখানা-ঘরে গৃহকর্তা এবং নিমন্ত্রিতগণ গল্পে নিরত, অন্দর হইতে কখন ভোজনের ডাক আসিবে তাহারই প্রতীক্ষা করিতেছেন। আজ রবিবার, তাড়া নাই, বেলা অনেক হইয়াছে।
তিনকড়িবাবুর বয়স ষাট বৎসর, ক্ষীণ দেহ, দাড়ি কামানো। শীর্ণ গোঁফে তামাকের ধোঁয়ায় পাকা খেজুরের রং ধরিয়াছে 一 কথা কহিবার সময় আরসোলার দাড়ার মত নড়ে। তিনি দৈব ব্যাপারে বড় একটা বিশ্বাস করেন না৷ প্রথম পরিচয়ে শ্যামবাবুকে বুজরুক সাব্যস্ত করিয়াছিলেন, কেবল লাভের আশায় কম্পানিতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু আজ কালীঘাট হইতে প্রত্যাগত সদ্যঃস্নাত শ্যামবাবুর অভিনব মূর্তি দেখিয়া কিঞ্চিৎ আকৃষ্ট হইয়াছেন। শ্যামবাবুর পরিধানে লাল চেলী, গেরুয়া রঙের আলোয়ান, পায়ে বাঘের চামড়ার শিং-তোলা জুতা। দাড়ি এবং চুল সাজিমাটি দ্বারা যথাসম্ভব ফাঁপানো, এবং কপালে মস্ত একটি সিন্দুরের ফোঁটা।
তিনকড়িবাবু তামাক-টানার অন্তরালে বলিতে ছিলেন — ‘দেখুন স্বামীজী, হিসেবই হ’ল ব্যাবসার সব। ডেবিট ক্রেডিট যদি ঠিক থাকে, আর ব্যালান্স যদি মেলে, তবে সে বিজনেসের কোনও ভয় নেই।’
শ্যামবাবু। আজ্ঞে, বড় যথার্থ কথা বলেছেন। সেই-জন্যেই তো আমরা আপনাকে চাই ৷ আপনাকে আমরা মধ্যে মধ্যে এসে বিরক্ত করব, হিসেব সম্বন্ধে পরামর্শ নেব一
তিনকড়ি। বিলক্ষণ, বিরক্ত হব কেন। আমি সমস্ত হিসেব ঠিক করে দেব। মিটিংগুলো একটু ঘন ঘন করবেন। না হয় ডিরেক্টরস্ ফী বাবদ কিছু বেশী খরচ হবে। দেখুন, অডিটার-ফডিটার আমি বুঝি না। আরে বাপু, নিজের জমাখরচ যদি নিজে না বুঝলি তবে বাইরের একটা অর্বাচীন ছোকরা এসে তার কি বুঝবে? ভারী আজকাল সব বুক-কিপিং শিখেছেন! সে কি জানেন একটা গোলকধাঁধাঁ, কেউ যাতে না বোঝে তারই চেষ্টা। আমি বুঝি রোজ কত টাকা এল, কত খরচ হ’ল, আর আমার মজুদ রইল কত। আমি যখন আমড়াগাছি সবডিভিজনের ট্রেজারির চার্জে, তখন এক নতুন কলেজ-পাস গোঁফ- কামানো ডেপুটি এলেন আমার কাছে কাজ শিখতে ৷ সে ছোকরা কিছুই বোঝে না, অথচ অহংকারে ভরা। আমার কাজে গলদ ধরবার আস্পর্ধা। শেষে লিখলুম কোল্ডহাম সাহেবকে, যে হুজুর, তোমরা রাজার জাত, দু-ঘা দাও তাও সহ্য হয়, কিন্তু দিশী ব্যাঙাচির লাথি বরদাস্ত করব না। তখন সাহেব নিজে এসে সমস্ত বুঝে নিয়ে আড়ালে ছোকরাকে ধমকালেন। আমাকে পিঠ চাপড়ে হেসে বললেন 一 ওয়েল তিনকড়িবাবু, তুমি হ’লে কতকালের সিনিয়র অফিসর, একজন ইয়ং চ্যাপ তোমার কদর কি বুঝবে? তার পর দিলেন আমাকে নওগাঁয়ে গাঁজা-গোলার চার্জে বদলি ক’রে। যাক সে কথা। দেখুন, আমি বড় কড়া লোক ৷ দস্ত হাকিম ব’লে আবার নাম ছিল। মন্দির টন্দির আমি বুঝি না, কিন্তু একটি আধলাও কেউ আমাকে ফাঁকি দিতে পারবে না। রক্ত জল করা টাকা আপনার জিম্মায় দিচ্ছি, দেখবেন যেন一
শ্যাম। সে কি কথা! আপনার টাকা আপনারই থাকবে আর শতগুণ বাড়বে। এই দেখুন না আমি আমার যথাসর্বস্ব পৈতৃক পঞ্চাশ হাজার টাকা এতে ফেলেছি। আমি না হয় সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী, অর্থে প্রয়োজন নেই, লাভ যা হবে মায়ের সেবাতেই ব্যয় করব। বিপিন আর এই অটল ভায়াও প্রত্যেকে পঞ্চাশ হাজার ফেলছেন। গণ্ডেরি এক লাখ টাকার শেয়ার নিয়েছে। সে মহা হিসেবী লোক – লাভ নিশ্চিত না জানলে কি নিত? তিনকড়ি। বটে, বটে? শুনে আশ্বাস হচ্ছে। আচ্ছা, একবার কোল্ডহাম সাহেবকে কনসণ্ট করলে হয় না? অমন সাহেব আর হয় না৷
‘ঠাঁই হয়েছে’一চাকর আসিয়া খবর দিল।
‘উঠতে আজ্ঞা হ’ক ব্রহ্মচারী মশায়, আসুন অটল-বাবু, চল হে বিপিন।’ তিনকড়িবাবু সকলকে অন্দরের বারান্দায় আনিলেন।
শ্যামবাবু বলিলেন ‘করেছেন কি রায়সাহেব, এ যে রাজসূয় যজ্ঞ। কই আপনি বসলেন না?’
তিনকড়ি ৷ বাতে ভুগছি, ভাত খাইনে, দু-খানা সুজির রুটি বরাদ্দ।
শ্যাম। আমি একটি ফেকারিণী-তন্ত্রোক্ত কবচ পাঠিয়ে দেব, ধারণ ক’রে দেখবেন। শাক ভাজা, কড়াইয়ের ডাল – এটা কি দিয়েছ ঠাকুর, এঁচোড়ের ঘণ্ট? বেশ, বেশ? শোধন করে নিতে হবে। সুপক্ক কদলী আর গব্যঘৃত বাড়িতে হবে কি? আয়ুর্বেদে আছে一পনসে কদলং কদলে স্বতম্। কদলীভক্ষণে পনসের দোষ নষ্ট হয়, আবার ঘৃতের দ্বারা কদলীর শৈত্যগুণ দূর হয় ৷ পুঁটিমাছ ভাঙ্গা–বাঃ। রোহিতাদপি রোচকাঃ পুন্টিকাঃ সদাভর্জিতাঃ। ওটা কিসের অম্বল বললে 一 কামরাঙা? সর্বনাশ, তুলে নিয়ে যাও। গত বৎসর শ্রীক্ষেত্রে গিয়ে ঐ ফলটি জগন্নাথ প্রভুকে দান করেছি। অম্বল জিনিসটা আমারও সয়ও না一 শ্লেষ্মার ধাত কি না। উপ, উপ, উপ, প্রাণায় অপানায় সোপানায় স্বাহা। শয়নে পদ্মনাভঞ্চ ভোজনেতু জনার্দনম্। আরম্ভ কর হে অটল।
অটল। (জনাস্তিকে ) আরম্ভের ব্যবস্থা যা দেখছি তাতে বাড়ি গিয়ে ক্ষুন্নিবৃত্তি করতে হবে।
তিনকড়ি। আচ্ছা ঠাকুরমশায়, আপনাদের তন্ত্রশাস্ত্রে এমন কোন প্রক্রিয়া নেই যার দ্বারা লোকের – ইয়ে – মানমর্যাদা বৃদ্ধি পেতে পারে?
শ্যাম ৷ “অবশ্য আছে ৷ যথা কুলার্ণবে 一 অমানিনা মানদেন৷ অর্থাৎ কুলকুণ্ডলিনী জাগ্রতা হ’লে অমানী ব্যক্তিকেও মান দেন। কেন বলুন তো?
তিনকড়ি। হাঃ হাঃ, সে একটা তুচ্ছ কথা। কি জানেন, কোল্ডহাম সাহেব বলেছিলেন, সুবিধা পেলেই লাট সাহেবকে ধরে আমায় বড় খেতাব দেওয়াবেন। বার বার তো রিমাইণ্ড করা ভাল দেখায় না তাই ভাবছিলুম যদি তন্ত্রে-মন্ত্রে কিছু হয়। মানিনে যদিও, তবুও一
শ্যাম ৷ মানতেই হবে। শাস্ত্র মিথ্যা হতে পারে না। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, এ বিষয়ে আমার সমস্ত সাধনা নিয়োজিত করব। তবে সদগুরু প্রয়োজন, দীক্ষা ভিন্ন এসব কাজ হয় না। গুরুও আবার যে-সে হ’লে চলবে না। খরচ তা আমি যথা সম্ভব অল্পেই নির্বাহ করতে পারব। তিনকড়ি। হুঁ। দেখা যাবে এখন। আচ্ছা, আপনাদের আপিসে তো বিস্তর লোকজন দরকার হবে, তা আমার একটি শালীপো আছে, তার একটা হিল্লে লাগিয়ে দিতে পারেন না? বেকার ব’সে ব’সে আমার অন্ন ধ্বংস করছে, লেখাপড়া শিখলে না, কুসঙ্গে মিশে বিগড়ে গেছে। একটা চাকরি জুটলে বড় ভাল হয়। ছোকরা বেশ চটপটে আর স্বভাব-চরিত্রও বড় ভাল ৷
শ্যাম। আপনার শালীপো? কিছু বলতে হবে না। আমি তাকে মন্দিরের হেড-পাণ্ডা ক’রে দেব। এখনি গোটা-পনর দরখাস্ত এসেছে - তার মধ্যে পাঁচজন গ্র্যাজুয়েট। তা আপনার আত্মীয়ের ক্লেম সবার ওপর।
তিনকড়ি। আর একটি অনুরোধ। আমার বাড়িতে একটি পুরনো কাঁসর আছে一 একটু ফেটে গেছে, কিন্তু আদত খাঁটী কাঁসা। জিনিসটা মন্দিরের কাজে লাগানো যায় না? সস্তায় দেব!
শ্যাম। নিশ্চয়ই নেব৷ ওসব সেকেলে জিনিস কি এখন সহঝে মেলে?
গণ্ডেরির ভবিষ্যদ্বাণী সফল হইয়াছে। বিজ্ঞাপনের জোরে এবং প্রতিষ্ঠাতৃগণের চেষ্টায় সমস্ত শেয়ারই বিলি হইয়া গিয়াছে৷ লোকে শেয়ার লইবার জন্য অস্থির, বাজারে চড়া দামে বেচা-কেনা হইতেছে।
অটলবাবু বলিলেন一 ‘আর কেন শ্যাম-দা, এইবার নিজের শেয়ার সব ঝেড়ে দেওয়া যাক। গণ্ডেরি তো খুব একচোট মারলে ৷ আজকে ডবল দর ৷ দু-দিন পরে কেউ ছোঁবেও না।’
শ্যাম ৷ বেচতে হয় বেচ, মোদ্দা কিছু তো হাতে রাখতেই হবে, নইলে ডিরেক্টর হবে কি ক’রে?
অটল। ডিরেক্টরি আপনি করুন গে। আমি আর হাঙ্গামায় থাকতে চাইনে। সিদ্ধেশ্বরীর কৃপায় আপনার তো কার্যসিদ্ধি হয়েছে।
শ্যাম। এই তো সবে আরম্ভ। মন্দির, ঘরদোর, হাট-বাজার সবই তো বাকী। তোমাকে কি এখন ছাড়া যায়?
অটল ৷ থেকে আমার লাভ? পেটে খেলে পিটে সয়৷ এখন তো ব্রাদার-ইন-ল কোম্পানির মরসুম চলল। আমাদের এইখানে শেষ ৷
শ্যাম। আরে ব্যস্ত হও কেন, এক যাত্রায় কি পৃথক্ ফল হয়? সন্ধ্যেবেলা যাব এখন তোমাদের বাড়িতে, গণ্ডেরিকেও নিয়ে যাব৷