Pitara logo

লম্বকর্ণ - ১

রায় বংশলোচন ব্যানাজি বাহাছুর জমিন্দার অ্যান্ড অনারারি ম্যাজিস্ট্রেটর বেলেঘাটা-বেঞ্চ প্রত্যহ বৈকালে খালের ধারে হাওয়া খাইতে যান। চল্লিশ পার হইয়া ইনি একটু মোটা হইয়া পড়িয়াছেন; সেজন্য ডাক্তারের উপদেশে হাঁটিয়া এক্সারসাইজ করেন এবং ভাত ও লুচি বর্জন করিয়া দু-বেলা কচুরি খাইয়া থাকেন।

কিছুক্ষণ পায়চারি করিয়া বংশলোচনবাবু ক্লান্ত হইয়া খালের ধারে একটা ঢিপির উপর রুমাল বিছাইয়া বসিয়া পড়িলেন৷ ঘড়ি দেখিলেন - সাড়ে ছ-টা বাজিয়া গিয়াছে। জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ। সিলোনে মনসুন পৌছিয়াছে। এখানেও যে-কোনও দিন হঠাৎ ঝড়-জল হওয়া বিচিত্র নয়। বংশলোচন উঠিবার জন্য প্রস্তুত হইয়া হাতের বর্মাচুরুটে একবার জোরে টান দিলেন। এমন সময় বোধ হুইল, কে যেন পিছু হইতে তার জামার প্রান্ত ধরিয়া টীনিতেছে এবং মিহি সুরে বলিতেছে -‘হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ’। ফিরিয়া দেখিলেন - একটি ছাগল। বেশ হৃষ্টপুষ্ট ছাগল। কুচকুচে কালো নধর দেহ, বড় বড় লটপটে কানের উপর কচি পটোলের মত দুটি শিং বাহির হইয়াছে। বয়স বেশী নয়, এখনও অজাত-শ্মশ্রু। বংশলোচন বলিলেন - ‘আরে এটা কোথা থেকে এল? কার পাঠা? কাকেও তো দেখছি না।’

ছাগল উত্তর দিল না। কাছে ঘেঁষিয়া লোলুপনেত্রে তাহাকে পর্ষবেক্ষণ করিতে লাগিল। বংশলোচন তাহার মাথায় ঠেলা দিয়া বলিলেন -‘যাঃ পালা, ভাগ হি’য়াসে’। ছাগল পিছনের দু-পায়ে ভর দিয়া দাঁড়াইয়া উঠিল, এবং সামনের দু-পা মুড়িয়া ঘাড় বাঁকাইয়া রায়বাহাদুরকে ঢুঁ মারিল।

রায়বাহাছুর কৌতুক বোধ করিলেন। ফের ঠেল৷ দিলেন। ছাগল আবার খাড়া হইল এবং খপ করিয়া তাহার হাত হইতে চুরুটটি কাড়িয়া লইল। আহারান্তে বলিল -‘অর্-র্-র্’ অর্থাৎ আর আছে?

বংশলোচনের সিগার-কেসে আর একটিমাত্র চুরুট ছিল। তিনি সেটি বাহির করিয়া দিলেন। ছাগলের মাথা-ঘোরা, গা-বমি বা অপর কোনও ভাব-বৈলক্ষণ্য প্রকাশ পাইল না। দ্বিতীয় চুরুট নিঃশেষ করিয়া পুনরায় জিজ্ঞাসা করিল - “অরু-র্-র্‌ ?’ বংশলোচন বলিলেন -_‘আর নেই। তুই এইবার যা। আমিও উঠি।’

ছাঁগল বিশ্বাস করিল না, পকেট তল্লাস করিতে লাগিল। বংশলোচন নিরুপায় হুইয়া চামড়ার সিগার-কেসটি খুলিয়া ছাগলের সম্মুখে ধরিয়া বলিলেন -_ ‘না বিশ্বাস হয়, এই দেখ, বাপু।” ছাগল এক লক্ষে সিগার-কেস কাড়িয়া লইয়া চর্বণ আরম্ভ করিল। রায়-বাহাদুর রাগিবেন কি হাসিবেন স্থির করিতে না পারিয়া বলিয়া ফেলিলেন - ‘শ-শালা’।

অন্ধকার হইয়া আসিতেছে। আর দেরি করা উচিত নয়। বংশলোচন গৃহাভিমুখে চলিলেন। ছাগল কিন্ত তাহার সঙ্গ ছাড়িল না। বংশলোচন বিব্রত হইলেন। কার ছাগল কি বৃত্তান্ত তিনি কিছুই জানেন না, নিকটে কোনও লোক নাই যে জিজ্ঞাসা করেন। ছাগলটাও নাছোড়বান্দা, তাড়াইলে যায় না। অগত্যা বাড়ি লইয়া যাঁওয়া ভিন্ন গত্যন্তর নাই। পথে যদি মালিকের সন্ধান পান ভালই, নতুবা কাল সকালে যা হ’ক একটা ব্যবস্থা করিবেন।

বাড়ি ফিরিবার পথে বংশলোচন অনেক খোঁজ লইলেন, কিন্তু কেহই ছাগলের ইতিবৃত্ত বলিতে পারিল না। অবশেষে তিনি হতাশ হইয়া স্থির করিলেন যে আপাতত নিজেই উহাকে প্রতিপালন করিবেন।

হঠাৎ বংশলোচনের মনে একটা কাটা খচ করিয়া উঠিল। তাঁহার যে এখন পত্নীর সঙ্গে কলহ চলিতেছে। আজ পাঁচ দিন হইল কথা বন্ধ। ইঁঁহাদের দাম্পত্য কলহ বিনা আড়ম্বরে নিম্পন্ন হয়। সামান্য একটা উপলক্ষ্য, ছ-চারটি নাতিতীক্ষ্ণ বাক্যবাণ, তার পর দিন-কতক অহিংস অসহযোগ, বাক্যালাপ বন্ধ, পরিশেষে হঠাৎ একদিন সন্ধিস্থাপন ও পুনর্মিলন। এরকম প্রায়ই হয়, বিশেষ উদ্বেগের কারণ নাই। কিন্ত আপাতত অবস্থাটি সুবিধাজনক নয়। গৃহিণী জন্তু-জানোয়ার মোটেই পছন্দ করেন না। বংশলোচনের একবার কুকুর পোষার শখ হইয়াছিল, কিন্তু গৃহিণীর প্রবল আপত্তিতে তাহা সফল হয় নাই। আজ একে কলহ চলিতেছে তার উপর ছাগল লইয়া গেলে আর রক্ষা থাকিবে না। একে মনস।, তায় ধুনার গন্ধ।

চলিতে চলিতে রায়বাহাদুর পত্বীর সহিত কাল্পনিক বাগযুদ্ধ আরম্ভ করিলেন। একটা পাঁঠা পুষিবেন তাতে কার কি বলিবার আছে? তার কি স্বাধীনভাবে একটা শখ মিটাইবার ক্ষমতা নাই? তিনি একজন মান্যগণ্য সন্ত্রান্ত ব্যক্তি, বেলেঘাটা রোডে তাহার প্রকাণ্ড অট্টালিকা, বিস্তর ভূসম্পত্তি। তিনি একজন খেতাবধারী অনারারি হাকিম, - পঞ্চাশ টাকা পর্ধস্ত জরিমানা, এক মাস পর্যন্ত জেল দিতে পারেন। তাহার কিসের দুঃখ, কিসের লজ্জা, কিসের নাঁরভস্নেস? বংশলোচন বারবার মনকে প্রবোধ দিলেন - তিনি কাহারও তোয়াক্কা রাখেন না।

বৈঠকখানায় যে সান্ধ্য আড্ডা বসে তাহাতে নিত্য বহুসংখ্যক রাজা-উজির বধ হইয়। থাকে। লাটসাহেব, স্থুরেন বাঁড়ুজ্যে, মোহনবাগান, পরমার্থতত্ব, প্রতিবেশী অধর-বুড়োর শ্রাদ্ধ, আলিপুরের নৃতন কুমির __ কোন প্রসঙ্গই বাদ যায় না। সম্প্রতি সাত দিন ধরিয়া বাঘের বিষয় আলোচিত হইতেছিল। এই স্তরে গতকল্য বংশলোচনের শ্যালক নগেন এবং দূরসম্পর্কের ভাগিনেয় উদয়ের মধ্যে হাতাহাতির উপক্রম হয় । অন্যান্য সভ্য অনেক কষ্টে তাহাদিগকে নিরস্ত’ করেন।

, বংশলোচনের ধৈঠকখানা ঘরটি বেশ বড় ও সুসজ্জিত ; অর্থাৎ অনেকগুলি ছবি, আয়না, আলমারি, চেয়ার ইত্যাদি জিনিসপত্রে ভরতি। প্রথমেই নজরে পড়ে একটি কার্পেটে বোনা ছবি, কাল জমির উপর আসমানী রডের বিড়াল। যুদ্ধের সময় বাজারে সাদ! পশম ছিল না, সুতরাং বিড়ালটির এই দশ। হইয়াছে । ছবির নীচে সর্বসাধারণের অবগতির জন্য বড় বড় ইংরেজী অক্ষরে লেখ! আছে– 0401 তার নীচে রচয়িত্রীর নাম _- মানিনী দেবী । ইনিই গৃহৃকত্রা ৷ ঘরের অপর দিকের দেওয়ালে একটি রাধাকৃষ্ণের তৈল-

চিত্র। কৃষ্ণ রাধাকে লইয়া কদমতলায় দাড়াইয়। ‘ আছেন, একটি প্রকাণ্ড সাপ তাহাদিগকে পাক দিয়। পিষিয়া ফেলিবার চেষ্টা করিতেছে, কিন্তু রাধাকৃষ্ণের ভ্রক্ষেপ নাই; কারণ সাপটি বাস্তবিক সাপ নয়, ওঁ-কার মাত্র। তা-ছাঁড়া কতকগুলি মেমের ছবি আছে, তাদের অঙ্গে সিক্ষের ব্রাহ্মষশাড়ি এবং মাথায় কাল সুতার আলুলাফ়িত পরচুলা ময়দার কাই দিয়! আটিয়! দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু ইহাতেও তাহাদের মুখের দ্ররন্ত মেম-মেম-ভাব ঢাকা পড়ে নাই, সেজন্য জোর করিয়া নাক বি”ধাইয়া দেওয়া হইয়াছে । ঘরে ছুটি দেওয়াল-আলমাঁরিতে চীনামাটির পুতুল এবং কাচের খেলন! ঠাসা । উপরের শুইবার ঘরের চারিটি আলমারি বোঝাই হইয়! যাহ] বাড়তি হইয়াছে তাহাই নীচে স্থান পাইয়াছে। ইহা ভিন্ন আরও নানাপ্রকার আসবাব, যথা _- রাজা-রাণীর ছবি, রায়বাহাছ্বরের পরিচিত ও অপরিচিত ছোট-বড় সাহেবের ফোটোগ্রাফ, গিলটির ফ্রেমে বাঁধানো আয়না, আযল্ম্যানাক, ঘড়ি, রায়- বাহাদুরের সনদ, কয়েকটি অভিনন্বনপত্র ইত্যাদি আছে।

আজ যথাসময়ে আড্ডা বসিয়াছে। বংশলোচন এখনও বেড়াইয়া ফেরেন নাই। তাহার অন্তরঙ্গ বন্ধু

বিনোদ উকিল ফরাশের উপর তাকিয়। ঠেস দিয়া খবরের কাগজ পড়িতেছেন ৷ বৃদ্ধ কেদার চাটুজ্যে মহাশয় হু’কা’ হাতে ঝিমাইতেছেন। নগেন ও উদয় অতি কষ্টে ক্রোধ রুদ্ধ করিয়া ওত পাতিয়। বসিয়া আছে, একট। ছুতা পাইলেই পরস্পরকে আক্রমণ করিবে ।

আর চুপ করিয়া থাকিতে ন৷ পারিয়া উদয় বলিল __ যাই বল, বাঘের মাপ কখনই ল্যাজ-ম্থদ্ধ, হ’তে পারে না। তা হ’লে মেয়েছেলেদের মাপও চুল-সুদ্ধ হবে না কেন? আমার বউএর বিনুনিটাই তো তিন ফুট হবে। তবে কি বলতে চাও, বউ আট ফুট লম্বা ?

নগেন বলিল __ “দেখ. উদৌ, তোর বউএর বর্ণনা আমর। মোটেই শুনতে চাই না। বাঘের কথা৷ বলতে হয় বল্‌।

চাটুজ্যে মহাশয়ের তন্দ্রা ছুটিয়া গেল। বলিলেন -__ “আও হা, তোমাদের এখানে কি বাঘ ছাড়া অন্য জানোয়ার নেই ?’ রঃ

এমন সময় বংশলোচন ছাগল লইয়া ফিরিলেন । বিনোদবাবু বলিলেন __ “বাহবা, বেশ পাঁঠাটি তো৷। কত দিয়ে কিনলে হে?

“দিব্বি পুরু? পাঠা,

বংশলোচন সমস্ত ঘঠন৷ বিবৃত করিলেন । বিনোদ বলিলেন __- “বেওয়ারিস মাল, বেশী দিন ঘরে না রাখাই ভাল। সাবাড় ক’রে ফেল – কাল রবিবার আছে, লাগিয়ে দাও ।,

চাটুজ্যে মশায় ছাগলের পেট টিপিয়া বলিলেন __ “দিবিব পুরুষ, পাঁঠ। ৷ খাসা কালিয়া হবে ।’

নগেন ছাগলের উরু টিপিয়া বলিল -_ ‘উন্থু, হাড়ি- কাবাব। একটু বেশী ক’রে আদা-বাট। আর গ্যাজ।,

উদয় বলিল _- “ওঃ, আমার বউ আ্যায়স। গুলিকাবাব করতে জানে !;

৯৭ ) গড ডলিক।

নগেন জকুটি করির়। বলিল _- উদ আবার ?

বংশলোচন বিরক্ত হইয়া বলিলেন,-_- “তোমাদের কি জন্ত দেখলেই খেতে ইচ্ছে করে? একট। নিরীহ অনাথ প্রাণী আশ্রয় নিয়েছে, ত| কেবল কালিয়া আঁর কাবাব !,

ছাগলের সংবাদ শুনিয়া বংশলোচনের সপ্তমবর্ষীয়! কন্ঠা টে*গী এবং সর্বকনিষ্ঠ পুত্র ঘেন্ট ছুটিয়া আসিল। ঘেণ্ট, বলিল __ “ও বাবা, আমি পাঠা খাব। পাঠার ম-ম-ম .

বংশলোচন বলিলেন __ ঘা যান শুনে শুনে কেবল খাই-খাই শিখছেন ।

ঘেন্ট, হাত-পা ছুড়িয়া। বলিল __ হ্যা আমি ম-ম-ম- মেটুলি খাব ।?

টেলী বলিল -_ “বাবা, আমি গাঁঠাকে পুষবো। একটু লাল ফিতে দাও না।

বংশলোচন। বেশ তো! একটু খাওয়া-দাওয়া করুক, তাঁর পর নিয়ে খেলা করিম এখন ।

টেগী। পাঁঠার নাম কি বল না?

বিনোদ বলিলেন _- নামের ভাবনা! কি। ভাস্ুরক, দধিমুখ, মসীপুচ্ছ, লম্বকর্ণ _+

চাটুজ্যে বলিলেন -__ ‘লম্বকর্ণই ভাল ।: লম্বকর্ণ

বংশলোচন কন্তাকে একটু অন্তরালে লইয়া গিয়া: জিজ্ঞাস করিলেন __ “টে”পুঃ তোর মা এখন কি করছে রে? ্‌

টেপী। এক্ষুনি তো কল-ঘরে গেছে।

বংশলোচন। ঠিক জানিস? তা হ’লে এখন এক ঘণ্টা নিশ্চিন্দি। দেখ বিকে বল, চট করে ঘোড়ার ভেজানো-ছোল। চাট্টি এনে এই বাইরের বারান্দায় যেন ছাঁগলটাকে খেতে দেয়। আর দেখ বাড়ির ভেতর

উস আতিশয্যে টে’গপী গিতার আদেশ তুলিয়া গেল। ছাগলের গলায় লাল ফিতা বাধিয়। টানিতে টানিতে অন্দরমহলে লইয়া গিয়া বলিল – “ও মা, লীগ গির এস, লম্বকর্ণ দেখবে এস । _ মানিনী মুখ মুছিতে মুছিতে স্নানের ঘর হইতে বাহির হইয়া বলিলেন __ “আ মর, ওটাকে কে আনলে ? দূর দূর _- ও ঝি, ও বাতানী, শীগগির্‌ ছাগলটাকে বার করে দে, ঝণটা মার ।?

টে*লী বলিল -_ “ব। রে, ওকে তো বাবা এনেছে, আমি পুষব 1,

৯১০) গডডলিকা

ঘেণ্ট, বলিল -_ “ঘোড়া-ঘোড়া খেলব ।,

মানিনী বলিলেন – “খেল! বার ক’রে দিচ্ছি । ভদ্দর লোকে আবার ছাগল পোষে ! বেরো, বেরো _ ও দরওয়ান, ও চুকন্দর সিং –?

হুজৌর’ বলিয়। হাক দিয়! চুকন্দর সিং হাজির হইল। শীর্ণ খর্বাকৃতি বৃদ্ধ, গালপাট্টা দাড়ি, পাকানো গৌঁপ, জাকালে। গল। এবং ততোধিক জাকালো নাম __ ইহারই জোরে সে চোট্রা এবং ডাকুর আক্রমণ হইতে , দেউড়ি রক্ষা করে ।

অন্দরের মধ্যে হট্টগোল শুনিয়া রায়বাহাছুর বুঝিলেন যুদ্ধ অনিবার্ধ। মনে মনে তাল ঠকিয়া বাড়ির ভিতরে আমিলেন। গৃহিণী তাহার প্রতি দৃক্পাত ‘না করিয়। দরোয়ানকে বলিলেন -_ ছাগলটাকে আভি নিকাল দেও, এক দম ফটকের বাইরে । নেই তো এক্ষুনি ছিত্টি নোংরা করেগা |,

চুকন্দর বলিল -_ “বহুত আচ্ছা ।’

বংশলোচন পাল্ট। হুকুম দিলেন __ “দেখো চুকন্দর সিংং এই বকরি গেটের বাইরে যাগা তো তোমর! নোকরি ভি যাগ।। লম্বকর্ণ

হজৌর

টকন্দর বলিল -_ “বহুত আচ্ছা ।, মানিনী স্বামীর প্রতি একটি অগ্নিময় নয়নবাণ হানিয়া বলিলেন __ হ্্যালা টে”পী হতচ্ছাডী, রাত্তির

১০৯১ গডডলিক।

হয়ে গেল __ গিলতে হবে না? থাকিস তুই ছাগল নিয়ে, কাল যাচ্ছি আমি হাটখোলায়।” হাটখোলায় গৃহিণীর পিত্রালয়

বংশলোচন বলিলেন -__ “টপ, ঝিকে ব’লে দে, বৈঠকখানা-ঘরে আমার শোবার বিছান। ক’রে দেবে। আমি পিড়ি ভাঙতে পারি না। আর দেখ ঠাকুরকে বল আমি মাংস খাব না। শুধু খানকতক কচুরি, একটু ডাল আর পটলভাজ। ।;

রাকালে বড়লোকদের বাড়িতে একটি করিয়া পুলা থাঁকিত। ত্রুদ্ধা আর্ধনারীগণ সেখানে আশ্রয় লইতেন। কিন্তু আধপুত্রদের জন্য সে-রকম কোনও পাকা বন্দোবস্ত ছিল না, অগত্যা তাহারা এক পত্ীর সহিত মতান্তর হইলে অপর এক পত্বীর দ্বারস্থ হইতেন। আজকাল খরচপত্র বাড়িয়া যাওয়ায় এই সকল স্ুন্দুর প্রাচীন প্রথ। লোপ পাইয়াছে। এখন মেয়েদের ব্যবস্থা শুইবার ঘরের মেঝের উপর মাছুর, অথব। তেমন তেমন হইলে বাপের -বাঁড়ি। আর ভদ্দ্র- লোকদের একমাত্র আশ্রয় বৈঠকখানা।

১০২ লম্বকর্ণ

আহারান্তে বংশলোচন বৈঠকখানা-ঘরে একাকী শয়ন করিলেন। অন্ধকারে তাঁর ঘুম হয় না এজন্য ঘরের এক কোণে পিলস্জের উপর একটা রোড়ির তেলের প্রদীপ জ্বলিতেছে। কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করিয়া বংশলোচন উঠিয়৷ ইলেক্টিক লাইট জ্বালিলেন এবং একখানি গীত! লইয়া পড়িতে বসিলেন। এই গীতাটি তাঁর ছুঃসময়ের সম্বল, পত্বীর সহিত অসহযোগ হইলে তিনি এটি লইয়া নাড়াচাড়া করেন এবং সংসারের অনিত্যতা উপলব্ধি করিতে চেষ্টা করেন। কর্মযোগ ‘ পড়িতে পড়িতে .বংশলোচন ভাবিতে লাগিলেন –তিনি কী এমন অন্যায় কাজ করিয়াছেন যার জন্ত মানিনী এরূপ ব্যবহার করেন? বাপের বাড়ি যাবেন _- ইস, ভারী তেজ ! তিনি ফিরাইয়া আনিবার নামটি করিবেন নখ যখন গরজ হইবে আপনিই ফিরিবে। গৃহিণী শখ করিয়া যে-সব জগ্জাল ঘরে পোরেন তা তে। বংশলোচন নীরবে বরদাস্ত করেন। এই তো! সেদিন পনরটা জলচৌকি, তেইশট বটি এবং আড়াই শ টাকার খাগড়াই বাসন কেন। হইয়াছে, আর দোষ হইল কেবল ছাগলের বেলা ? হুঃ যতো সব – | ৫ বংশলোচন গীতাখানি সরাইয়। রাখিয়া আলোর সুইচ

১০৩ গডডলিকা!

বন্ধ করিলেন এবং ক্ণকাল পরে নাসিকাধ্বনি করিতে লাগিলেন ।

লম্বকর্ণ বারান্দায় শুইয়া রোমন্থন করিতেছিল। ছুইটা বর্ম চুরুট খাইয়া! তাহার ঘুম চটিয়া গিয়াছে । রাত্রি একটা আন্দাজ জোরে হাওয়া উঠিল । ঠাণ্ড। লাগায় সে বিরক্ত হইয়া উঠিয়া পড়িল। বৈঠকখানা-ঘর হইতে মিটমিটে আলে! দেখ। যাইতেছে । লন্বকর্ণ তাহার বন্ধনরজ্জু চিবাইয়া কাটিয়া ফেলিল এবং দরজা খোল পাইয়া নিঃশব্দে বৈঠকখানায় প্রবেশ করিল।

আবার তাহার ক্ষুধ। পাইয়াছে। ঘরের চারিদিকে ঘুরিয়া একবার তদারক করিয়া লইল। ফরাশের এক কোণে একগোছ! খবরের কাগজ রহিয়াছে চিবাইয়। দেখিল, অত্যন্ত নীরস। অগত্যা সে গীতার তিন অধ্যায় উদরস্থ করিল। গীতা খাইয়া গল! শুখাইয়া গেল। একটা উচু তেপায়ার উপর এক কুঁজা জল আছে, কিন্তু তাহা নাগাল পাওয়া যায় না। লম্বকর্ণ তখন. প্রদীপের কাছে গিয়া রেড়ির তেল চাখিয়া দেখিল, বেশ স্ুস্বা। চকচক করিয়া সবটা খাইল। প্রদীপ নিবিল।

১০৪ লম্বৃকর্ণ

বংশলোচন স্বপ্প দেখিতেছেন _- সন্ধিস্থাপন হইয়। গিয়াছে। . হঠাৎ পাশ ফিরিতে তাহার একটা নরম গরম স্পন্দনশীল স্পর্শ অনুভব হইল । নিদ্রাবিজড়িত স্বরে বলিলেন -__ “কখন এলে ? উত্তর পাইলেন __ ছু” হু” ভু ভর |,

হুলস্থুল কাণ্ড । চোর -__ চোর _- বাথ হ্যায় _- এই চুকন্দর পিং–জল্দি আও __ নগেন __ উদো __ শীগ্গির আয় _- মেরে ফেললে _-

চুকন্দর তার মুঙ্গেরী বন্দুকে বারুদ ভরিতে লাগিল। নগেন ও উদয় লাঠি ছাতা টেনিস ব্যাট য। পাইল তাই লইয়া! ছুটিল। মানিনী ব্যাকুল হুইয়া হাপাইতে হীপাইতে নামিয়া আসিলেন। বংশলোচন ক্রমে প্রকৃতিস্থ হইলেন। লনম্বকর্ণ ছু-এক ঘ! মার খাইয়। ব্য ব্যা-করিতে লাগিল। বংশলোচন ভাবিলেন, বাঘ বরঞ্চ ছিল ভাল । মানিনী ভাবিলেন ঠিক হয়েছে।

‘রবেল৷ বংশলোচন চুকন্দরকে পাড়ায় খোঁজ

6 লইতে বলিলেন _- কোনও ভাল! আদমী ছাগল পুষিতে রাজী আছেকি না। যে-সে লোককে

১০৫ গড ডলিকা

তিনি ছাগল দিবেন না। এমন লোক চাই যে যত্ব করিয়া প্রতিপালন করিবে, টাকার লোভে বেচিবে না, মাংসের লোভে মারিবে না ।

আটটা বাজিয়াছে। বংশলোচন বহিবাটার বারান্দায় চেয়ারে বসিয়া আছেন, নাপিত কামাইয়া দিতেছে। বিনোদবাবু ও নগেন অমৃতবাজারে ড্যালহাউমি ভার্সস মোহনবাগান পড়িতেছেন। উদয় ল্যাংড়া আমের দর করিতেছে । এমন সময় চুকন্দর আসিয়া সেলাম করিয়! বলিল -_ লাটুবাবু আয়ে হেঁ।,

তিনজন সহচরের সহিত লাটুবাবু বারান্দায় আসিয়া নমস্কার করিলেন। তাহাদের প্রত্যেকের বেশভূষা প্রায় একই প্রকার -__ ঘাড়ের চুল আমূল ছণাটা, মাথার উপর পর্বতাকার তেড়ি, রগের কাছে ছু-গোছ। চুল ফণা ধরিয়া আছে। হাতে রিস্ট-ওয়াচ, গায়ে আগুল্ফলম্থিত পাতল। পাঞ্জাবি, তার ভিতর দিয়া গোলাপী গেঞ্জির আভ। দেখা যাইতেছে । পায়ে লপেটা, কানে অর্ধদগ্ধ সিগারেট ।

বংশলোচন বলিলেন __ আপনাদের কোথেকে আসা হচ্ছে ?

লাটুবাবু বলিলেন __ আমরা বেলেঘাটা কেরাদিন ব্যাড । ব্যাণ্ড-মাস্টার লটবর লন্দী -_ অধীন। লোকে

১০৬ লম্বকর্ণ

লাটুবাবু ব’লে ডাকে। শুনলুম আপনি একটি পাঠা বিলিয়ে দেবেন, তাই সঠিক খবর লিতে এসেছি ।?

বিনোদ বলিলেন __ আপনারা বুঝি কানেস্তারা বাজান ?’

লাটু। কানেস্তারা কি মশায়? দস্ভরমত কলসাট | এই ইনি লবীন লিয়োগী ক্লারিয়লেট __ এই লরহরি লাগ ফুলোট -_ এই লবকুমার লন্দন ব্যায়লা। তা ছাড় কলেট, পিকলুঃ হারমোনিয়া, ঢোল, কত্তাল সব লিয়ে উলিশজন আছি। বম অয়েল কোম্পানির ডিপোয় আমরা কাজ করি। ছোট-সাহেবের সেদিন বে হ’ল, ফিষ্টি দিলে, আমরা বাঁজালুম, সাহেব খুশী হয়ে টাইটিল দিলে __ কেরাসিন ব্যাণ্ড।

বংশলোচন। দেখুন আমার একটি ছাগল আছে, সেটি আপনাঁকে দ্রিতে পারি, কিন্ত _-

লাটু। আমর হলুম উলিশটি প্রীলী, একট! পাঠায় কি হবে মশায়? কি বল হে লরহরি ?

নরহরি । লস্ডি, লস্তি।

বংশলোচন। আমি এই শর্তে দিতে পারি যে ছাগলটিকে আপনি যত্ব ক’রে মানুষ করবেন, বেচতে পাবেন না, মারতে পারবেন না ।

১০৭ গড ডলিক।

লাটু। এ যে আপনি লতুন কথা বলছেন মশায়। ভদ্দর নোকে কখনও ছাগল পোষে?

নরহরি। পাঠী লয় যে ছুধ দেবে।

নবীন। পাখি লয় যে পড়বে।

নবকুমার। ভেড়। লয় যে কম্বল হবে।

বংশলোচন। সেযাই হোক। বাজে কথা বলবার আমার সময় নেই। নেবেন কি না] বলুন।

লাটুবাবু ঘাড় চুলকাইতে লাগিলেন। নরহরি বলিলেন _- “লিয়ে লাও হে লাটুবাবু লিয়ে লাও। ভদ্দর নোক বলছেন অত করে।

ংশলোচন। কিন্তু মনে থাকে যেন বেচতে পারবে না, কাটতে পারবে না ।

লাটু। সে আপনি ভাববেন ন! ৷ লাটু-লন্দীর কথার লড়চড় লেই।

লম্বকর্ণকে লইয়! বেলেঘাটা কেরাসিন ব্যাণ্ড চলিয়! গেল। বংশলোচন বিমর্ষচিত্তে বলিলেন-_ ‘ব্যাটাদের দিয়ে ভরসা হচ্ছে না! বিনোদ আশ্বাস দিয়া বলিলেন _- ভেবো না হে, তোমার পাঠা গন্ধর্লোকে বাস করবে। ফাঁকে পড়লুম আমরা ।

১০৮ লম্বকর্ণ

ন্ধ্যার আড্ডা বসিয়াছে। আজও বাঘের গল্প

চলিতেছে । চাটুজ্যে মহাশয় বলিতেছেন __ “সেটা তোমাদের ভূল ধারণা । বাঘ বলে একটা ভিন্ন জানোয়ার নেই। ও একটা অবস্থার ফের, আরসোলা হ’তে যেমন কাচপোকা’। আজই তোঁমর! ডারউইন শিখেছ – আমাদের ওসব ছেলেবেলা থেকেই জানা আছে। আমাদের রায়বাহাহ্ুর ছাগলটা বিদেয় ক’রে খুব ভাল কাঁজ করেছেন। কেটে খেয়ে ফেলতেন তো! কথ! ছিল না, কিন্তু বাড়িতে রেখে বাড়তে দেওয়া -_ উন”

বংশলোচন একখানি নৃতন গীতা! লইয়৷ নিবিষ্টচিন্তে অধ্যয়ন করিতেছেন – নায়ং ভূত্বা ভবিতা বা ন ভুয়ঃ, অর্থাৎ কিনা, আত্মা একবার হইয়া আর যে হইবে ন। তা নয়। অজে! নিত্যঃ _- অজে! কিনা - ছাগলং। ছাগলটা যখন বিদায় হইয়াছে, তখন আজ সন্ধিস্থাপন। হইলেও হইতে পারে ।

বিনোদ বংশলোচনকে বলিলেন – “হে কৌন্তেয়, তুমি গ্রীভগবানকে একটু থামিয়ে রেখে একবার চাটুজ্যে মশায়ের কথাটা! শোন । মনে বল পাবে ।

উদয় বলিল -_- “আমি সেবার যখন সিমলেয় যাই __”

৯০০ গড ডলিকা

নগেন। মিছে কথা বলিস নি উদো। তোর দৌড় আমার জানা আছে, লিলুয়া অবধি ।

উদয়। বাঃ আমার দাদাশ্বশুর যে সিমলেয় থাকতেন । বউ তো সেইখানেই বড় হয়। তাই তো। রং অত –

নগেন। খবরদার উদ ।

চাটুষ্যে। যা বলছিলুম শোন। আমাদের মজিল- পুরের চরণ ঘোষের এক ছাগল ছিল, তার নাম ভুটে । ব্যাটা খেয়ে খেয়ে হ’ল ইয়। লাশ, ইয়া শিং ইয়া দাড়ি। একদিন চরণের বাড়িতে ভোজ __ লুচি, পাঠার কালিয়া, এইসব। জীচাবার সময় দেখি, ভুটে পাঁঠার মাংস খাচ্ছে । বললুম -_ দেখছ কি চরণ, এখুনি ছাঁগলটাকে বিদেয় কর -__ কাচ্চাবাচ্চা নিয়ে ঘর কর, প্রাণে ভয় নেই? চরণ শুনলে না। গরিবের কথা বাঁসী হ’লে ফলে। তার পরদিন থেকে ভুটে নিরুদ্বেশ । খোঁজ- খোঁজ কোথা গেল। এক কচ্ছর পরে মশায় সেই ছাগল সৌদরবনে পাওয়া গেল। শিং নেই বললেই হয়, দাড়ি প্রায় খসে গেছে, মুখ একেবারে হাঁড়ি ; বর্ণ হয়েছে যেন কীচ। হলুদ, আর তার ওপর দেখ! দিয়েছে মশায় __আাজি-ভীজি ডোরা-ডোরা। ডাক! হ’ল __ভূটে,

৮৯০

“ভুটে বললে __ হালুম’

ভুটে! ভূটে বললে _-হালুম লোকজন দূর থেকে নমস্কার ক’রে ফিরে এল। লাটুবাবু আয়ে হে।,

১৯১ গড ডলিক।

সপারিষদ লাটুবাবু প্রবেশ করিলেন । লম্বকর্ণও সঙ্গে আছে । বিনোদ বলিলেন -_ “কি ব্যাণ্ড-মাষ্টার, আবার কিমনে করে?

লাটুবাবুর আর সে লাবণ্য নাই। টুল. উশক খুশক, চোখ বসিয়া গিয়াছে, জামা ছি’ড়িয়া গিয়াছে । সজলনয়নে হাউ-মাউ করিয়া বলিলেন -_ “সর্বনাশ হয়েছে মশায়। ধনেপ্রাণে মেরেছে । ও হোঃ হোঃ হো |?

নরহরি বলিলেন __ “আঃ কি কর লাটুবাবু, একটু: থির হও। হুজুর যখন রয়েছেন তখন একটা বিহিত করবেনই

বংশলোচন ভীত হইয়া বলিলেন -_ “কি হয়েছে __ ব্যাপার কি?

লাটু। মশায়, ওঁই পাঠাটা __

চাটুজ্যে বলিলেন -_ হু”, বলেছিলুম কি না ?’

লাটু। ঢোলের চামড়া কেটেছে, ব্যায়লার ভাত খেয়েছে, হারমোনিয়ার চাবি সমস্ত চিবিয়েছে। আর – আর – আমার পাঞ্জাবির পকেট কেটে লববই টাকার লোট – ও হো হো! !

নরহরি। গিলে ফেলেছে । পাঠা নয় হুজুর,

১১২

“মরছি টাকার শোকে, আর আপনি বলছেন জোলাপ খেতে ?’

সাক্ষাৎ শয়তান। সর্বস্ব গেছে, লাটুর প্রাণটি কেবল আপনার ভরসায় এখনও খুকপুক করছে।, , বংশলোচন। ফ্যাসাদে ফেললে দেখছি । নরহরি। দোহাই হুজুর, লাটুর দশাটা একবার দেখুন, একট! ব্যবস্থা ক’রে দিন -_ বেচারা মারা যায়।

১১৩ গড ডলিকা

বংশলোচন ভাবিয়া বলিলেন -_ একটা জোলাপ দিলে হয় না?

লাটুবাবু উচ্ছ্বসিত কে বলিলেন __ “মশায়, এই কি আপনার বিবেচন। হ’ল ? মরছি টাকার শোকে, আর আপনি বলছেন জোলাপ খেতে ?’

বংশলোচন। আরে তুমি খাবে কেন, ছাগলটাকে দিতে বলছি।

নরহরি। হায় হায়, হুজুর এখনও ছাগল চিনলেন, না! কোন্‌ কালে হজম ক’রে ফেলেছে । লোট তো লোট __ ব্যায়লার তাত, ঢোলের চামড়া, হারমোনিয়ার চাবি, মায় ইন্টিলের কত্তাল।

বিনোদ । লাটুবাবুর মাথাটি কেবল আস্ত রেখেছে।

বংশলোচন বলিলেন __ “যা হবার তা তো হয়েছে । এখন বিনোদ, তুমি একটা খেসারত ঠিক ক’রে দাঁও। বেচারার লোকসান যাতে না হয়, আমার ওপর বেশী জুলুমও ন1 হয়। ‘ ছাঁগলটা বাড়িতেই থাকুক, কাল যা হয় করা যাবে।

অনেক দরদস্তরের পর একশ টাকায় রফা হইল। বংশলোচন বেশী কষাকষি করিতে দিলেন না । লাটুবাবুর দল টাক! লইয়! চলিয়া! গেল।

১১৪ লম্বকর্ণ

লম্বকর্ণ ফিরিয়াছে শুনিয়া টে”গী ছুটিয়া আঁসিল। বিনোদ বলিলেন -_- ও টে“পুরানী, শীগগির গিয়ে তোমার মাকে বলো কাল আমরা এখানে খাব __- লুচি, পোলাও, মাংস _

টেলী। বাবা আর মাংস খায় না ।

বিনোদ। বলকি! হ্থ্যা হে বংশু, প্রেমটা এক পাঠা থেকে বিশ্ব-পীঠায় পৌছেছে না কি? আচ্ছা তুমি না খাও আমরা আছি। যাও তো টৌ’পু, মাকে বল সব যোগাড় করতে । ।

টেলী। সে এখন হচ্ছে না। মা-বাবার ঝগড়া চলছে, কথাটি নেই।

বংশলোচন ধমক দিয়া বলিলেন - হ্যা হ্যা -__ কথাটি নেই -- তুই সব জানিস। যা যাঃ, ভারি জ্যাঠ হয়েছিস।’

টেগী। বা-রে, আমি বুঝি কিচ্ছু টের পাই না? তবে কেন মা খালি-খালি আমাকে বলে -_ টে”গী, পাঁখাটা মেরামত করতে হবে __ টে”পী, এমাসে আরও ছ-শ টাকা চাই। তোমাকে বলে ন। কেন ?

বংশলোচন। থাম্‌ থাম্‌ বকিস নি।

বিনোদ । হে রায়বাহাছুর, কন্যাকে বেশী ঘাটিও

১১৫ গড় ডলিক!

না, অনেক কথা ফাস করে দেবে। অবস্থাট! সঙ্গিন হয়েছে বল?

বংশলোচন । আরে এতদিন তো সব মিটে যেত, ওই ছাগলটাই মুশকিল বাধালে।

বিনোদ ৷ ব্যাটা ঘরভেদী বিভীষণ । তোমারই বা অত মায়া কেন? খেতে না পার বিদেয় ক’রে দাও । জলে বাস কর, কুমিরের সঙ্গে বিবাদ ক’রো না।

বংশলোচন দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন -_ “দেখি কাল যা হুম করা যাবে ।

এ রাত্রিও বংশলোচন বৈঠকখানায় বিরহশয়নে যাঁপন করিলেন। ছাগলটা আস্তাবলে বাধা ছিল, উপদ্রব করিবার সুবিধা পায় নাই।

পেশ বৈকালে সাড়ে পাঁচটার সময় বংশলোচন বেড়াইবার জন্য প্রস্তুত হইয়া একবার এদিক- ওদিকে চাহিয়া দেখিলেন, কেহ তাকে লক্ষ্য করিতেছে কি. না। গৃহিণী ও ছেলেমেয়েরা উপরে আছে। ঝি-চাকর অন্দরে কাজকর্মে ব্যস্ত। চুকন্দর সিং তার ঘরে বসিয়া আটা সানিতেছে। লম্বকর্ণ আস্তাঁবলের

১৯১৬ লম্বকর্ণ

কাছে বাধা আছে এবং দড়ির সীমার মধ্যে যথাসম্ভব লক্ষবম্প করিতেছে । বংশলোচন দড়ি হাতে করিয়! ছাগল লইয়া আস্তে আস্তে বাহির হইলেন ।

পাছে পরিচিত লোকের সঙ্গে দেখা হয় সেজন্য বংশলোচন সলজ। রাস্তায় না গিয়! গলি ঘু’জির ভিতর দিয়া চলিলেন। পথে এক ঠোঙা জিলিপি কিনিয়। পকেটে রাখিলেন। ক্রমে লোকালয় হইতে দূরে আসিয়া জনশূন্য খাল-ধারে পৌছিলেন ।

আজ তিনি স্বহস্তে লম্বকর্ণকে বিসর্জন দিবেন, যেখানে পাইয়াছিলেন আবার সেইখানেই ছাড়িয়। দিবেন __ যা থাকে তার কপালে । যথাস্থানে আসিয়। বংশলোচন জিলিপির ঠোঙাটি ছাগলকে খাইতে দিলেন। পকেট হইতে এক, টুকর। কাগজ বাহির করিয়া তাহাতে লিখিলেন __

এই ছাগল রেলেঘাটা খালের ধারে কুড়াইয়া পাইয়াছিলাম। প্রতিপালন করিতে না পারায় আবার সেইখানেই ছাড়িয়। দিলাম । আল্লা কালী ধিশুর দিব্য ইহাকে কেহ মারিবেন না। |

লেখার পর কাগজ ভশখজ করিয়া একটা ছোট টিনের কৌটায় ভরিয়। লম্বকর্ণের গলায় ভাল করিয়া বাঁধিয়া দিলেন । তার পর বংশলোচন শেষবার ছাগলের

১১৭ গড ডলিকা

গায়ে হাত বুলাইয়া আস্তে আস্তে সরিয়া পড়িলেন। লম্বকর্ণ তখন আহারে ব্যস্ত ।

দূরে আসিয়াও বংশলোচন বার বার পিছু ফিরিয়া দেখিতে লাগিলেন। লন্বকর্ণ আহার শেষ করিয়া এদিক ওদিক চাহিতেছে। যদি তাহাকে (্খিয়া ফেলে এখনি পশ্চাদ্ধাবন করিবে! এদিকে আকাশের অবস্থাও ভাল নয়। বংশলোচন জোরে জোরে চলিতে লাগিলেন ।

আর পারা যায় না, হাফ ধরিতেছে। পথের ধারে একট ত্েতুলগাছের তলায় বংশলোচন বসিয়। পড়িলেন। লম্বকর্ণকে আর দেখ। যায় না। এইবার তাহার মুক্তি -_- আর কিছুদিন দেরি করিলে জড়ভরতের অবস্থা হইত । ওই হতভাগ। কৃষ্ণের জীবকে আশ্রয় দিতে গিয়া তিনি নাকাল হইয়াছেন । গৃহিণী তাহার উপর মর্মান্তিক রুষ্ট, আত্মীয়স্বজন তাহাকে খাইবার জন্য ই! করিয়া আছে -__ তিনি এক! কীহাতক সামলাইবেন ? হায়ু রে সত্যযুগ, যখন শিবি রাজা শরণাগত কপোতের জন্য প্রাণ দিতে গিয়াছিলেন __- মহিষীর ক্রোধ, সভাসদ্ব্গের বেয়াদবি, কিছুই তাহাকে ভোগ করিতে হয় নাই ।

দ্রম্‌ ছদ্দ.ড় ছুড়, দড়ড়ড় ড়! আকাশে কে ঢেটর। পিটিতেছে? বংশলোচন চমকিত হইয়া! উপরে চাহিয়৷

১১৮ পল

লম্বকণ

দেখিলেন, অন্তরীক্ষের গমুজে এক পৌঁচ সীসা-রঙের অস্তর মাখাইয়৷ দিয়াছে। দূরে এক ঝণক সাদ! বক জোরে পাখা চালাইয়া পালাইতেছে। সমস্ত চুপ-__ গাছের পাতাটি নড়িতেছে না। আসন্ন ছুর্যোগের ভয়ে স্থাবর জঙ্গম হতভম্ব হইয়। গিয়াছে । বংশলোচন উঠিলেন, কিন্ত আবার বসিয়া পড়িলেন। জোরে হাটার ফলে তার বুক ধড়ফড় করিতেছিল।

সহসা আকাশ চিড় খাইয়। ফাটিয়া গেল । এক ঝলক বি্যৎ _- কড় কড় কড়া -__- ফাটা! আকাশ আবার বেমালুম জুড়িয়া গেল। জঈশানকোণ হইতে একটা ঝাপসা পর্দা তাড়। করিয়া আসিতেছে । তাহার পিছনে যা-কিছু সমস্ত মুছিয়া গিয়াছে, সামনেও আর দেরি নাই। ওই এল, ওই এল! গাছপালা শিহরিয়া উঠিল, লম্বা-লম্ব। তাঁলগাছগুল। প্রবল বেগে মাথা নাড়িয়। আপত্তি জানাইল। কাকের দল আর্তনাদ করিয়। উড়িবার চেষ্টা করিল, কিন্তু ঝাপট। খাইয়া আবার গাছের ডাল আকড়াইয়। ধরিল। প্রচণ্ড ঝড়। প্রচণ্ডতর বৃষ্টি। যেন এই নগণ্য উইটিবি __ এই ক্ষুদ্র কলিকাতা শহরকে ডুবাইবার জন্য ন্বর্গের তেত্রিশ কোটি দেবতা সার বাঁধিয়া বড় বড় ভূঙ্গার হইতে তোড়ে জল

১১০ গডডলিকা

ঢালিতেছেন । মোট নিরেট জলধারা, তাহার ফাকে ফাকে ছোট ছোট ফৌটা। সমস্ত শৃহ্য ভরাট হুইয়। গিয়াছে ।

মান-ইজ্জত কাপড় চোপড় সবই গিয়েছে, এখন প্রাণট। রক্ষা পাইলে হয়৷ হা! রে হতভাগা ছাগল, কি কুক্ষণে __

বংশলোচনের চোখের সামনে একটা। উগ্র বেগনী আলো খেলিয়া গেল – সঙ্গে সঙ্গে আকাশের সঞ্চিত বিশ কোটি ভোন্ট, ইলেক্টি_সিটি অদৃূরব্তী একটা নারিকেল গাছের ত্রন্মরন্র ভেদ করিয়া বিকট নাদে ভূগর্ভে প্রবেশ করিল। |

রাশি রাশি সরিষার ফুল। জগৎ লুপ্ত, তুমি নাই, আমি নাই। বংশলোচন সংজ্ঞা হারাইয়াছেন।

৯৫ সং ১৫ সঃ

বৃষ্টি থামিয়াছে কিন্তু এখনে। সে সেন করিয়া হাওয়া চলিতেছে । ছেঁড়া মেঘের পর্দা ঠেলিয়৷ দেবতার! ছু-চারটা মিটমিটে তারার লগ্ন লইয়া নীচের অবস্থা তদারক করিতেছেন ।

বংশলোচন কদ’ম-শয্যায় শুইয়া! ধীরে ধীরে সংজ্ঞা লাভ করিলেন। তিনি কে? রায়বাহাছর । কোথায়? খালের নিকট । ও কিসের শব্দ? সোনা-ব্যাং। তার নষ্ট স্মৃতি ফিরিয়া আসিয়াছে । ছাগলট। ?

১২০

চি সু +222ই-লুু আহ শশা শহতী

রি নি রা ‘নুচি ক’খানি খেতেই হবে’

মানুষের স্বর কানে আসিতেছে । কে তাকে ডাকিতেছে ? “মাম! -_ জামাইবাবু - বংশু,আছ ? - হুজৌর _

অদূরে একটা ঘোড়ার গাড়ি দীড়াইয়া আছে। জনকতক লোক লন লইয়া ইতস্তত ঘুরিতেছে এবং

১২১ গড়ডলিক।

তাহাকে ডাকিতেছে । একটি পরিচিত নারীকে ক্রন্দন- ধ্বনি উঠিল।

রায়বাহাছুর চাঙ্গা হইয়া বলিলেন _- “এই যে আমি এখানে আছি __ ভয় নেই -

মানিনী বলিলেন __ “আজ আর দোতলায় উঠে কাজ নেই। ও ঝি, এই বৈঠকখান। ঘরেই বড় ক’রে বিছানা ক’রে দেতো। আর দেখ$ আমার বালিশটাও দিয়ে যা । আঃ চাটুজ্যে মিনসে নড়ে ন7া। ওকি-__সে’ হবে না __ এই গরম লুচি ক-খানি খেতেই হবে, মাথা খাও। তোমার সেই বোতলটায়কি আছে -_ তাই একটু চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে দেব নাকি ?

ছা ভু ভু ভা

বংশলোচন লাফাইয়। উঠিয়। বলিলেন __ ‘আ্যা, ওটা! আবার এসেছে ? নিয়ে আয় তে। লাঠিট। __

মানিনী বলিলেন, _- আহা কর কি, মেরো না। ও বেচারা বৃষ্টি থামতেই ফিরে এসে তোমার খবর দিয়েছে! তাইতেই তোমায় ফিরে পেলুম । ওঃ হরি মধুস্থাদন !,

১২২ লম্বকর্ণ

লম্বকর্ণ বাড়িতেই রহিয়া গেল, এবং দিন দিন শশিকলার ন্যায় বাড়িতে লাগিল। ক্রমে তাহার আধ হাত দাঁড়ি গজাইল। রায়বাহাছবর আর বড়-একট। খোঁজ খবর করেন না, তিনি এখন ইলেকশন লইয়া ব্যস্ত। মানিনী লম্বকর্ণের শিং কেমিক্যাল সোন। দিয়া বাঁধাইয়। দিয়াছেন। তাহার জন্য সাবান ও ফিনাইল ব্যবস্থা! হইয়াছে, কিন্তু বিশেষ ফল হয় নাই । লোকে দূর হইতে তাহাকে বিদ্রপ করে। লম্বকর্ণ গম্ভতীরভাবে সমস্ত শুনিয়। স্বায়, নিতান্ত বাড়াবাড়ি করিলে বলে __ ব-ব-ব _ অর্থাৎ যত ইচ্ছ। হয় বকিয়। যাও, আমি ও-সব গ্রাহ্য করি না।

শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী লিমিটেড - ২