
কলাবতী রাজকন্যা - (৮) - (৯)
(৮)
দিন নাই, রাত্রি নাই, কাঁদিয়া কাটিয়া ভূতুমের মা, বুদ্ধুর মায়ের দিন যায়। তাঁহারাও শুনিলেন, রাজপুত্রেরা ময়ূরপঙ্খী করিয়া কলাবতী রাজকন্যার দেশে চলিয়াছেন। শুনিয়া দুইজনে, দুইজনের গলা ধরিয়া আরও কাঁদিতে লাগিলেন।
কাঁদিয়া-কাটিয়া দুই বােনে শেষে নদীর ধারে আসিলেন। তাহার পরে, দুইজনে দুইখানা সুপারীর ডােঙ্গায়, দুইকড়া কড়ি, ধান দূর্বা আর আগা-গলুইয়ে পাছা-গলুইয়ে সিন্দুরের ফোঁটা দিয়ে ভাসাইয়া দিলেন।
বুদ্ধুর মা বলিলেন, –
“বুদ্ধ আমার বাপ!
কি করেছি পাপ?
কোন পাপে ছেড়ে গেলি, দিয়ে মনস্তাপ?
শুকপঙ্খী নায়ের পাছে ময়ূরপঙ্খী যায়,
আমার বাছা থাক্লে, যেতিস্ মায়ের এই নায়।
পৃথিবীর যেখানে যে আছে ভগবান,–
আমার বাছার তরে দিলাম এই দূর্বা ধান।”
ভূতুমের মা বলিলেন—
“বুদ্ধ আমার বাপ!
কি করেছি পাপ?
কোন পাপে ছেড়ে গেলি, দিয়ে মনস্তাপ?
শুকপঙ্খী নায়ের পাছে ময়ূরপঙ্খী যায়,
আমার বাছা থাক্লে, যেতিস্ মায়ের এই নায়।
পৃথিবীর যেখানে যে আছে ভগবান,–
আমার বাছার তরে দিলাম এই দূর্বা ধান।”
সুপারীর ডােঙ্গা ভাসাইয়া দিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে ভূতুমের মা, বুদ্ধুর মা কুঁড়েতে ফিরিলেন।
(৯)
ছুতােরের বাড়ী যাইতে- যাইতে পথে ভূতুম আর বুদ্ধ দেখিল, দুইখানি সুপারীর ডােঙ্গা ভাসিয়া যাইতেছে।
বুদ্ধ বলিল, “দাদা, এই তাে আমাদের না’, এই নায়ে উঠ।” ভূতুম, বলিল, “উঠ।”
তখন, বুদ্ধ আর ভূতুম দুইজনে দুই নায়ে উঠিয়া বসিল। দুই ভাইয়ের দুই ময়ূরপঙ্খী যে পাশাপাশি ভাসিয়া চলিল।
লােকজনে দেখিয়া বলে—“ও মা! এ আবার কি? বুদ্ধু বলে, ভূতুম বলে, “আমরা বুদ্ধু আর ভূতুম।”